পশ্চিম মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তার মধ্যে বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল এন্ড কলেজটি অন্যতম। প্রাচীন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার রাথুরা গ্রামে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশে। যতদুর জানা যায় ১৯০৮ সালের দিকে এলাকার জনসাধারণ গ্রামে একটি হাইস্কুলের প্রয়োজন অনুভব করায় তৎকালীন স্থানীয় জমিদার হৃদয়নাথ মজুমদার ও হরিনাথ মজুমদারের নিকট আবেদন করেন। আবেদনে সারা দিয়ে ১৯১৩ সনে তারা ১০ (দশ) বিঘা জমি দান করেন এবং উক্ত জমিতে “রাথুরা বান্ধব একাডেমি” নামে পাঠদানের যাত্রা শুরু হয়। চলতে থাকে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম। আলোকিত হতে শুরু করে এলাকার সাধারণ জনগন। কিন্তু এ আলোর দ্রুতি বেশিদুর এগুতে পারেনি। মাত্র কয়েক বছরের মাথায় এসে (সংগৃহীত তথ্যমতে) ১৯২১ অথবা ১৯২৯ সনের দিকে কে বা কারা আলোকিত এ প্রতিষ্ঠানটিকে আগুনে ভস্মীভূত করে দেয়।
দিশেহারা এলাকাবাসী, কঠিন সংকটে শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এহেন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের প্রাণ চঞ্চলতা, শিক্ষক মন্ডলীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গেরসহায়তায় বাঁশ-কাঠ-টিন সংগ্রহ করে নতুন উদ্যমে “বানিয়াজুরী ইংলিশ স্কুল” নামেপুণরায় যাত্রা শুরু হয়। ছড়াতে থাকে শিক্ষার আলো, আলোকিত হতে থাকে শিক্ষার্থীবৃন্দ। এগিয়ে আসেন এলাকার আরেক কৃতি সন্তান জনাব আব্দুল কাইয়ুম আনছারী (মুন্নু আনছারী)। তিনিও বেশ কিছু জায়গা স্কুলের নামে দান করেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত মেট্রিকুলেশন বা এসএসসি পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। তাই (প্রাপ্ত তথ্যমতে) ১৯৪৪ সনের শেষ দিকে এলাকাবাসীর উদ্যোগে স্কুলটিকে হাইস্কুলে উন্নীত করণের লক্ষেএক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৫ সনে এলাকবাসীর সম্মিলিত সিদ্ধান্তে স্কুলটিকে পূর্ণাঙ্গ হাইস্কুল হিসাবে গড়ে তোলা হয় এবং নামকরণ করা হয় “বানিয়াজুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়” নামে।
১৯৪৫ সনে পুনঃজীবন প্রাপ্তির পর স্কুলের স্বীকৃতি/অনুমোদন প্রয়োজন হয়ে পরে। ফলে তৎকালীন অথারেটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪৬ সনে বানিয়াজুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যাল্য-কে স্বীকৃতি প্রদান করে। শুরু হয় মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা। জন্ম নিতে থাকে খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ। এদের মধ্যে বুয়েটের প্রফেসর কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডঃ কায়কোবাদ, প্রবাসী ডঃ বিজন সাহা অন্যতম।
স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শুরু করে ২০১৮ পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটির যেসব ব্যক্তিবর্গের সুনাম সুখ্যাতি রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জনাব আবুল কাসেম চতু, এডভোকেট আহমেদ ইকবাল, আব্দুল কাইয়ুম আনছারী এবং নীনা রহমান। এডভোকেট আহমেদ ইকবাল পর্ষদ অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ২০১০ সনে প্রতিষ্ঠানটিকে কলেজে অর্থাৎ ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত করেন
আবারও নাম পরিবর্তন হয় “বানিয়াজুরী ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ”। প্রধান শিক্ষকের স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় অধ্যক্ষ। ২০১৫ সনে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান জনাব মোঃ আতোয়ার হোসেন। আতোয়ার স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, শিক্ষক মন্ডলীর সার্বিক সহযোগিতা, সর্বপরি সভাপতি নীনা রহমানের সহযোগিতায় ২০১৬-২০১৭ সনে প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণের তালিকাভূক্ত হয় এবং অনেক চড়াই উৎরাইয়ের পর ২০১৮ সনের ২৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জিও পায়। অর্থাৎ সরকারি স্বীকৃতি পায়। পথচলা শুরু হয় “বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল এন্ড কলেজ” নাম নিয়ে।